ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ: ইতিহাস ও ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিস্থিতি

Category : ,

“এই যুদ্ধ কেবল ভূখণ্ডের জন্য নয়, এটা অস্তিত্ব, অধিকার ও মানবিকতার প্রশ্ন।”


১. ঐতিহাসিক পটভূমি: সংঘাতের সূচনা

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের শিকড় গেড়ে আছে এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো ইতিহাসে। ধর্ম, জাতিসত্তা, ঔপনিবেশিক রাজনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত এই দ্বন্দ্বে।

  • ১৯১৭ | বালফোর ঘোষণা
    ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে একটি “ইহুদি জাতীয় আবাসভূমি” প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, যা আরবদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
  • ১৯৪৭ | জাতিসংঘ বিভাজন পরিকল্পনা
    জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেয়। ইহুদিরা মেনে নিলেও, আরবরা প্রত্যাখ্যান করে।
  • ১৯৪৮ | ইসরায়েলের স্বাধীনতা ও প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ
    ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে, প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যুদ্ধ শুরু করে।
  • ১৯৬৭ | ছয় দিনের যুদ্ধ
    ইসরায়েল গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি দখল করে। এই অঞ্চলগুলো এখনও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত।

২. ২০২৩–২০২৫: বর্তমান সংঘাতের প্রেক্ষাপট

২০২৩ | হামাসের আকস্মিক হামলা ও ইসরায়েলের প্রতিশোধ

  • অক্টোবর ২০২৩-এ হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায়, ১,২০০ জন নিহত হয়।
  • ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করে।

২০২৪ | যুদ্ধবিরতির চেষ্টা ও ব্যর্থতা

  • যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
  • কয়েক সপ্তাহ পরে তা ভেঙে যায় এবং যুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

৩. ২০২৫: যুদ্ধের নতুন ধাপ

“অপারেশন গিডিওন চারিয়টস”

  • ইসরায়েল মে ২০২৫-এ গাজা দখলের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
  • লক্ষ্য: হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা ও সকল জিম্মিকে মুক্ত করা।
  • দক্ষিণ গাজায় ৪ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে স্থানচ্যুত করা হয়।

মানবিক সংকট

  • গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধের তীব্র সংকট।
  • জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “মানবিক সহায়তা বন্ধ” ও “অসামান্য ক্ষয়ক্ষতি”-র অভিযোগ তোলে।

আঞ্চলিক উত্তেজনা

  • ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইয়েমেনের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা আক্রমণ চালায়।

৪. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • জাতিসংঘ: যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় ও মানবিক সহায়তার দাবি তোলে।
  • যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলের পাশে থাকলেও যুদ্ধের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
  • বিশ্ব গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ: যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও আরব বিশ্বে।

৫. সংকটের সমাধান কোথায়?

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত এখন আর কেবল দুটি রাষ্ট্রের বিষয় নয়—এটি একটি বৈশ্বিক মানবিক সংকট।
শুধুমাত্র সামরিক শক্তি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দরকার ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক সমাধান, শান্তি আলোচনায় আন্তরিকতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা।

“শান্তি তখনই আসবে, যখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।”


পাঠকের জন্য প্রশ্ন:
আপনি কী মনে করেন—এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান কীভাবে সম্ভব? মন্তব্যে আপনার মতামত জানান।

magnifiercrossmenu