
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পাহালগাম অঞ্চলের বৈসরান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক ঘটনা। এই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন এবং ২০ জন আহত হন। এই ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে কাশ্মীরের নিরাপত্তা, কূটনীতি, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।
পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি, যাদের মধ্যে অন্তত তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক ছিল, বৈসরান উপত্যকায় পর্যটকদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এই হামলার দায় স্বীকার করে 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' (TRF), যা লস্কর-ই-তইবার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত। হামলার সময় একজন পর্যটক দুর্ঘটনাক্রমে ভিডিও ধারণ করেন, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মুসলিম পনি-চালক সৈয়দ আদিল হুসাইন শাহ পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। ভারত সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে:
এছাড়া, ভারতীয় সেনাবাহিনী "অপারেশন সিন্ধুর" নামে একটি পাল্টা অভিযান চালায়, যার ফলে দুইটি পৃথক সংঘর্ষে ছয়জন জঙ্গি নিহত হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হামলার দায় অস্বীকার করে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলার প্রতিবাদ করেন এবং জলচুক্তি স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন।
G7 দেশসমূহ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কাতারসহ অনেক দেশ হামলার নিন্দা করে এবং ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়।
হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও পাল্টা হামলা করে। এই সংঘর্ষের পর ১০ মে ২০২৫ তারিখে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যদিও উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির সূচনার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে।
হামলার পর কাশ্মীরের পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পর্যটকরা দ্রুত অঞ্চল ত্যাগ করে, হোটেল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
ভারত সরকার আটটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল গঠন করে, যারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করবে। বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্যান্য দল এই উদ্যোগে সমর্থন জানায়।
পাহালগাম হামলা কেবল একটি সন্ত্রাসী হামলা নয়; এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, কাশ্মীরের নিরাপত্তা ও অর্থনীতি, এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই সংকটের সমাধানে সংলাপ, আস্থা পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।