বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াল ১০টি ঘূর্ণিঝড়

Category : , ,

বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড় প্রায়শই উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াল বিপর্যয় ডেকে আনে। এসব ঘূর্ণিঝড় বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং অগণিত ঘরবাড়ি, ফসল ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করেছে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াল ১০টি ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি।


১. ভোলা ঘূর্ণিঝড় (১২ নভেম্বর ১৯৭০)

  • প্রাণহানি: আনুমানিক ৫ লক্ষ মানুষ
  • ক্ষয়ক্ষতি: ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, নোয়াখালী
  • বিবরণ: এটি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ভয়াল ঘূর্ণিঝড়। ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে গোটা অঞ্চল ডুবে যায়।

২. ঘূর্ণিঝড় সিডর (১৫ নভেম্বর ২০০৭)

  • প্রাণহানি: প্রায় ৩,৫০০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: সুন্দরবন, বাগেরহাট, বরগুনা, খুলনা
  • বিবরণ: ঘণ্টায় ২৪০ কিমি গতির এই ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের বিশাল অংশ ধ্বংস করে ফেলে।

৩. ঘূর্ণিঝড় আইলা (২৫ মে ২০০৯)

  • প্রাণহানি: প্রায় ১৯০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট
  • বিবরণ: নদীভাঙন ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় উপকূলীয় মানুষজন ভয়াল দুর্ভোগের শিকার হন।

৪. ঘূর্ণিঝড় বুলবুল (নভেম্বর ২০১৯)

  • প্রাণহানি: প্রায় ২৫+
  • ক্ষয়ক্ষতি: খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট
  • বিবরণ: ভয়াল বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৫. ঘূর্ণিঝড় আমফান (২০ মে ২০২০)

  • প্রাণহানি: ২৬+
  • ক্ষয়ক্ষতি: সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর
  • বিবরণ: ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার এই ভয়াল ঘূর্ণিঝড় বহু ঘরবাড়ি, ফসল এবং বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করে।

৬. ঘূর্ণিঝড় ঘুর্ণি (মে ১৯৮৫)

  • প্রাণহানি: ১১,০০০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল
  • বিবরণ: প্রচণ্ড শক্তির এই ভয়াল ঝড় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায় এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাণ্ডব চালায়।

৭. ঘূর্ণিঝড় (২৯ এপ্রিল ১৯৯১)

  • প্রাণহানি: ১,৩৮,০০০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ
  • বিবরণ: ভয়াল জলোচ্ছ্বাস, ঘণ্টায় ২৫০ কিমি বেগের বাতাস ও দেরিতে সর্তকতা বিপুল প্রাণহানির কারণ হয়।

৮. ঘূর্ণিঝড় হেলেন (১৯৭১)

  • প্রাণহানি: প্রায় ৩,০০০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: খুলনা ও বরিশাল উপকূল
  • বিবরণ: যুদ্ধকালীন সময়ে হওয়ায় প্রচার কম হলেও, এটি ছিল একটি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় যার প্রভাব ছিল ব্যাপক।

৯. ঘূর্ণিঝড় রেশমি (২০০৮)

  • প্রাণহানি: প্রায় ৫০+
  • ক্ষয়ক্ষতি: খুলনা, সাতক্ষীরা
  • বিবরণ: কম মাত্রার হলেও কিছু অঞ্চলে ভয়ালভাবে তাণ্ডব চালায়।

১০. ঘূর্ণিঝড় মোখা (মে ২০২৩)

  • প্রাণহানি: সীমিত, তবে বড় ধরনের প্রস্তুতি
  • ক্ষয়ক্ষতি: কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ
  • বিবরণ: পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও, প্রকৃতির ভয়াল রূপ ধরা দেয় জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে।

শেষকথা,

প্রতিটি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির রুদ্ররূপের সামনে মানুষ কতটা অসহায়। তবে উন্নত পূর্বাভাস প্রযুক্তি, জনসচেতনতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতির ফলে আজ অনেক প্রাণ রক্ষা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের উচিত প্রতিটি দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত হওয়া।

magnifiercrossmenu