বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

Category : 

২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এটি দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিচে স্টারলিংক সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো:


১. আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও লাইসেন্স প্রাপ্তি

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) স্টারলিংককে ১০ বছরের জন্য অপারেটিং লাইসেন্স প্রদান করেছে। এই লাইসেন্সের আওতায় স্টারলিংক সারা দেশে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারবে।


২. খরচ ও সেবা প্যাকেজ

স্টারলিংক সেবার জন্য গ্রাহকদের এককালীন সরঞ্জাম খরচ প্রায় ৪৭,০০০ টাকা এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি প্রায় ৪,২০০ টাকা গুনতে হবে। এই খরচ অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে দূরবর্তী অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ।


৩. দূরবর্তী ও অবহেলিত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা

স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশের হাওর, চর, পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করবে, যেখানে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছানো কঠিন।


৪. দুর্যোগকালীন ইন্টারনেট সংযোগ

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল টাওয়ার ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিঘ্নিত হয়। স্টারলিংক স্যাটেলাইট-ভিত্তিক হওয়ায় এই সময়েও ইন্টারনেট সংযোগ বজায় রাখতে সক্ষম।


৫. সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি

নতুন নীতিমালার আওতায়, স্টারলিংকের ইন্টারনেট ট্রাফিক স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যা সরকারের নজরদারি ও প্রয়োজনে সেবা বন্ধ করার ক্ষমতা প্রদান করে।


৬. রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সিদ্ধান্ত

২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস স্টারলিংক চালুর নির্দেশ দেন। তিনি এলন মাস্কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ৯০ দিনের মধ্যে সেবা চালুর আহ্বান জানান।


৭. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও বাণিজ্যিক কূটনীতি

মার্কিন সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার সময় স্টারলিংক সেবা গ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।


৮. ডিজিটাল খাতে সম্ভাবনা

স্টারলিংক সেবা দেশের ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট ওয়ার্ক, ই-কমার্স ও অনলাইন শিক্ষার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বিশেষ করে, শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের ডিজিটাল উদ্যোক্তারা এর থেকে উপকৃত হবেন।


৯. সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

স্টারলিংক সেবা গ্রামের নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। টেলিমেডিসিন, অনলাইন শিক্ষা ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।


১০. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

যদিও স্টারলিংক সেবা প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, তবে এর উচ্চ খরচ ও স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারি ভর্তুকি বা সহযোগিতা ছাড়া এটি সাধারণ জনগণের জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে।


স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এটি দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

magnifiercrossmenu