এলিয়েন রহস্য: ভিনগ্রহবাসীদের নিয়ে ১০টি চমকপ্রদ ঘটনা

Category : 

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিশাল, রহস্যময় এবং অসীম। আমাদের পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষ বিস্ময় আর কৌতূহলের মধ্যে ছিল। এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসী সম্পর্কিত বহু ঘটনা, প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি এবং অজস্র গোপন নথিপত্র এই রহস্যকে আরও গভীর করে তুলেছে। এই ব্লগে আমরা এমন ১০টি চমকপ্রদ এলিয়েন-সম্পর্কিত ঘটনার কথা জানব, যেগুলো আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।


১. রসওয়েল ইউএফও দুর্ঘটনা (Roswell Incident, 1947)

নিউ মেক্সিকোর রসওয়েলে একটি অজানা উড়ন্ত বস্তু ভেঙে পড়ে। প্রথমে মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায়, এটি একটি "ফ্লাইং ডিস্ক"। পরে তারা দাবি করে এটি একটি আবহাওয়া বেলুন ছিল। কিন্তু বহু মানুষ মনে করে, এটি আসলে একটি এলিয়েন মহাকাশযান ছিল এবং এর ভিতরে মৃত ভিনগ্রহবাসীদের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। এটি আধুনিক ইউএফও রহস্যের সূচনাবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়।


২. দ্য ফিনিক্স লাইটস (Phoenix Lights, 1997)

১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ রাতে অ্যারিজোনা রাজ্যের আকাশে হাজারো মানুষ একটি বিশাল ত্রিভুজাকার আলো দেখতে পান। এটি কয়েক ঘণ্টা ধরে দেখা যায় এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান যে এটি কোনো সাধারণ বিমান ছিল না। মার্কিন সরকার ব্যাখ্যা দেয়, এটি ছিল সামরিক মহড়া। কিন্তু বহু মানুষ মনে করেন, এটি একটি এলিয়েন মহাকাশযান ছিল।


৩. ব্যাটল অফ লস অ্যাঞ্জেলেস (1942)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের আকাশে একটি অজানা বস্তু দেখে মার্কিন আর্মি কয়েক ঘণ্টা ধরে কামান গুলি চালায়। পরে বলা হয় এটি ছিল ভুল অ্যালার্ম। কিন্তু ফটোগ্রাফ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, আকাশে অদ্ভুত কিছু ছিল, যাকে অনেকেই এলিয়েন ইউএফও বলে মনে করেন।


৪. দ্য রেন্ডলশাম ফরেস্ট ইনসিডেন্ট (1980)

ইংল্যান্ডের রেন্ডলশাম ফরেস্টে দুইজন মার্কিন সৈনিক একটি উজ্জ্বল আলো লক্ষ্য করেন, যেটি একটি ত্রিপদী ধাতব বস্তুর মতো ছিল। তারা জানান, বস্তুটি গাছের পাশে নেমে আসে এবং পরে আকাশে মিলিয়ে যায়। এ ঘটনার ওপর বহু তদন্ত হয়, কিন্তু রহস্য থেকে যায় অমীমাংসিত।


৫. বার্নি এবং বেটি হিল অপহরণ (1961)

এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে রাতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় দাবি করেন, একটি উড়ন্ত চাকতিজাতীয় বস্তু তাদের অনুসরণ করে এবং পরে তারা অপহৃত হন। তারা মনে করেন, এলিয়েনেরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে স্মৃতি মুছে দিয়েছিল। এ ঘটনা প্রথম আলোচিত ইউএফও অপহরণ কেস হিসেবে পরিচিত।


৬. ব্রাজিলের ভারগিনহা ইনসিডেন্ট (1996)

ব্রাজিলের ভারগিনহা শহরে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা একটি দুর্ঘটনা কবলিত মহাকাশযান এবং তার ভেতরে এলিয়েন সদৃশ প্রাণী দেখেছেন। কিছু স্থানীয়রা দাবি করেন, সেনাবাহিনী সেই এলিয়েনদের ধরে নিয়ে যায় এবং ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়।


৭. জিমি কার্টার ইউএফও সাইটিং (1969)

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৬৯ সালে একটি উজ্জ্বল, গোলাকার বস্তু আকাশে দেখার দাবি করেন। তিনি পরবর্তীতে জানান, এটি কোনো সাধারণ বস্তু ছিল না এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইউএফও সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেন, যদিও পরে বলেন জাতীয় নিরাপত্তার কারণে তা সম্ভব হয়নি।


৮. চিলির সরকারি ইউএফও রিপোর্ট (2014)

চিলির সামরিক বিমানবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে একটি অদ্ভুত উড়ন্ত বস্তু দেখা যায়। রাডারে ধরা না পড়া ওই বস্তু থেকে ধোঁয়ার মতো কিছু নির্গত হতে দেখা যায়। সরকার স্বীকার করে, এটি অজানা এবং সম্ভবত এটি এলিয়েন প্রযুক্তির অংশ হতে পারে।


৯. পেন্টাগনের ইউএফও ভিডিও ফাঁস (2020)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তিনটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে নৌবাহিনীর পাইলটরা ইউএফও অনুসরণ করতে দেখা যায়। ভিডিওগুলোতে বস্তুগুলোর গতি, আকৃতি এবং আচরণ এতটাই অস্বাভাবিক ছিল যে, অনেকেই এগুলোকে এলিয়েন প্রযুক্তি বলে মনে করেন।


১০. হার্ভার্ডের অধ্যাপক অবিদ লোয়েবের 'ওউমুয়ামুয়া' থিওরি (2017)

২০১৭ সালে সৌরজগত দিয়ে একটি অদ্ভুত আকারের বস্তু (Oumuamua) চলে যায়। হার্ভার্ডের অধ্যাপক অবিদ লোয়েব দাবি করেন, এটি কোনো ধ্বংসপ্রাপ্ত এলিয়েন মহাকাশযান হতে পারে। যদিও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা একে প্রাকৃতিক বস্তু বলেই মনে করেন।


শেষকথা:
এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীদের নিয়ে জগৎজুড়ে হাজারো দাবি, গবেষণা ও রহস্যময় কাহিনি ছড়িয়ে আছে। কিছু ঘটনা স্রেফ কল্পনা বলে মনে হলেও, কিছু ঘটনা বিজ্ঞানেরও ব্যাখ্যার বাইরে রয়ে গেছে। আমরা এখনও নিশ্চিত নই—ভিনগ্রহে প্রাণ আছে কি না, তবে পৃথিবীতে এমন বহু ঘটনা রয়েছে যা এই প্রশ্নকে গভীর করে তুলেছে। হয়তো একদিন আমরা সত্যিই জানতে পারব—আমরা কি একা?


আপনার মতামত দিন:
আপনার কি মনে হয়, এলিয়েনরা সত্যিই আছে? নাকি এগুলো সব মনগড়া গল্প? কমেন্টে জানান আপনার মতামত!


magnifiercrossmenu