সুন্দরবনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ— সুন্দরবনের গাছপালা সম্পর্কে জানুন

Category : ,

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন শুধু বাঘের জন্য নয়, তার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ জগতের জন্যও বিখ্যাত। এখানে রয়েছে নানা ধরণের লবণ সহিষ্ণু গাছ, ঝোপ ও ওষধি গাছ। এই ব্লগে আমরা জানবো সুন্দরবনের ১০টি উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের সম্পর্কে, যেগুলো এই বনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।

১. গরান (Ceriops decandra)

গরান সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান গাছ। এটি লবণাক্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে এবং মাটিকে দৃঢ় করে তোলে। এর কাঠ শক্ত এবং আগুন জ্বালানোর জন্য উপযোগী।

২. গেওয়া (Excoecaria agallocha)

গেওয়া গাছ দেখতে সুন্দর হলেও এর দুধের মতো রস ত্বকে লাগলে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই গাছের পাতা ও ছাল থেকে ওষুধ তৈরি হয়।

৩. সুন্দরি (Heritiera fomes)

এই গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ। সুন্দরি কাঠ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে এই গাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

৪. বাইন (Avicennia officinalis)

বাইন গাছের শ্বাসমূল (pneumatophores) পানির নিচেও অক্সিজেন গ্রহণ করতে সাহায্য করে। এটি মাটির ক্ষয় রোধে সহায়ক।

৫. কেওড়া (Sonneratia apetala)

কেওড়া গাছের ফল ছোট ও খাওয়ার উপযোগী। এই গাছ মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

৬. ধুধুল (Xylocarpus granatum)

ধুধুল গাছের ফল বড় ও গোলাকার। এর কাঠ শক্ত এবং জাহাজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি বন এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

৭. গোলপাতা (Nypa fruticans)

গোলপাতা গাছ দেখতে অনেকটা নারকেল পাতার মতো, কিন্তু এটি জলাভূমিতে জন্মায়। এই গাছের পাতা দিয়ে ঘর ছাউনি, চাটাই, পাখা ও ঝুড়ি তৈরি হয়। গ্রামীণ জীবনযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উদ্ভিদ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৮. নিঝুম (Bruguiera gymnorhiza)

নিঝুম গাছের মূল সোজা ও শক্ত। এটি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করে। এর বীজ দেখতে হুকের মতো।

৯. হিঙ্গা (Phoenix paludosa)

হিঙ্গা একটি ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ, যা সাধারণত জলাভূমি ও নদীতীরবর্তী এলাকায় জন্মায়। এটি স্থানীয়ভাবে ঘরছাউনি ও ঝুঁপ বানাতে ব্যবহৃত হয়।

১০. ছন (Imperata cylindrica)

ছন ঘাস প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এবং বনের নিচু এলাকায় ছড়িয়ে থাকে। এটি বন্য প্রাণীদের খাদ্য এবং আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।


শেষকথা:
সুন্দরবনের এই উদ্ভিদগুলো শুধু বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বরং জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকা নির্ভরতার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দায়িত্ব হলো এই উদ্ভিদসম্পদ সংরক্ষণ করা ও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা।

magnifiercrossmenu