মাইগ্রেন অ্যাটাক কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে? জানুন সময়কাল ও করণীয়

মাইগ্রেন

মাইগ্রেন এমন এক ধরনের মাথাব্যথা, যা শুধু ব্যথাই নয়—এর সঙ্গে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, বমি ভাব, চোখে ঝলকানি ইত্যাদি নানা কষ্টদায়ক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তবে এই মাইগ্রেন অ্যাটাক কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে? অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।

সাধারণ সময়কাল: ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা

ন্যাশনাল হেডেক ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, একটি সাধারণ মাইগ্রেন অ্যাটাক সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে এটি একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। কারো মাত্র কয়েক ঘণ্টা, আবার কারো দুই-তিন দিন পর্যন্ত চলতে পারে।

নিউরোলজিস্ট ডা. আলেকজান্ডার মাউস্কপ বলেন, “মাইগ্রেন কতক্ষণ চলবে, তা নির্ভর করে কতগুলো ট্রিগার কাজ করেছে, আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, এবং ওষুধ কবে খেয়েছেন—এসব বিষয়ের ওপর।”

মাইগ্রেন অ্যাটাকের ধাপগুলো

মাইগ্রেন অ্যাটাক সাধারণত চারটি ধাপে ঘটে। সব ধাপ সবার ক্ষেত্রে দেখা না গেলেও, এর ধরনগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।

১. প্রোড্রোম (আগাম সংকেত)

অ্যাটাক শুরুর কয়েক ঘণ্টা বা একদিন আগেও দেখা দিতে পারে। উপসর্গ: মেজাজ বদল, ক্লান্তি, হাই উঠা, খাবারের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি।

২. অরা (Aura)

সবাই অরা অনুভব করেন না, তবে যাদের হয়, তারা সাধারণত চোখে ঝিলমিল দেখা, কথা বলতে সমস্যা, শরীর ঝিনঝিন করা ইত্যাদি উপসর্গে ভোগেন।

৩. হেডেক ধাপ

এটাই আসল মাইগ্রেন ব্যথার ধাপ। তীব্র, স্পন্দিত ব্যথা হয়, সাধারণত মাথার এক পাশে। এর সঙ্গে থাকতে পারে:

  • আলো/শব্দে সংবেদনশীলতা
  • বমি বা বমির ভাব
  • ক্লান্তি ও বিরক্তি

৪. পোস্টড্রোম (রিকভারি)

ব্যথা চলে যাওয়ার পরও শরীর দুর্বল থাকে। অনেকে এক ধরনের ‘হ্যাংওভার’-এর মতো অনুভব করেন।

সময়কাল কমানোর ঘরোয়া উপায়

মাইগ্রেনের আগাম সংকেত বুঝতে পারলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নিচে কিছু কার্যকর কৌশল দেওয়া হলো:

  • শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিন
  • ঘুম এবং পানি পান করুন
  • চোখ বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে থাকুন
  • কপালে ঠাণ্ডা কাপড় রাখুন
  • স্ট্রেস কমাতে ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করুন

ওষুধ সেবনের সঠিক সময়

মাইগ্রেন শুরু হওয়ার সাথেসাথে ওষুধ খাওয়া সবচেয়ে ভালো ফল দেয়। নিচে জনপ্রিয় কিছু ওষুধের ধরন উল্লেখ করা হলো:

✅ ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ:

  • অ্যাসপিরিন
  • অ্যাসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল)
  • আইবুপ্রোফেন
  • এক্সেড্রিন মাইগ্রেন (ক্যাফেইনসহ যৌগিক ট্যাবলেট)

✅ ট্রিপটানস (সর্বাধিক ব্যবহৃত)

যেমন সুমাট্রিপটান। দ্রুত কাজ করে, তবে হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সাবধানতা জরুরি।

✅ জিপ্যান্টস (নতুন প্রজন্মের ওষুধ)

যাদের ট্রিপটান সহ্য হয় না, তাদের জন্য নিরাপদ। উদাহরণ: Nurtec, Ubrelvy

✅ ডিটানস (নতুন বিকল্প)

রক্তনালী সংকুচিত না করে কাজ করে। উদাহরণ: Reyvow

অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক!

মাইগ্রেনের ওষুধ বেশি খেলে ‘মেডিকেশন ওভারইউস হেডেক’ হতে পারে, যা আরও বেশি মাথাব্যথা তৈরি করে। যদি আপনি সপ্তাহে ২ বা ততোধিকবার ওষুধ খাচ্ছেন, তবে অবশ্যই একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

প্রতিরোধই উত্তম চিকিৎসা

যদি আপনি নিয়মিত মাইগ্রেনে ভোগেন, তাহলে শুধু ব্যথা কমানো নয়—প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন:

  • প্রতিদিন এক সময় ঘুমানো ও জাগা
  • ট্রিগার করা খাবার (চকলেট, চিজ ইত্যাদি) এড়িয়ে চলা
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • হালকা ব্যায়াম
  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

সুতরাং

মাইগ্রেন অস্বস্তিকর হলেও, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এর সময়কাল ও তীব্রতা কমানো সম্ভব। আগাম সংকেত বুঝে দ্রুত ওষুধ গ্রহণ, বিশ্রাম এবং ডাক্তারি পরামর্শ আপনার জীবনকে অনেকটাই সহজ করে তুলতে পারে।

magnifiercrossmenu