PayPal কেন বাংলাদেশে এখনও আসছে না? জানুন ১০টি প্রধান কারণ

Category : 

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইন ব্যবসার প্রসার দিন দিন বাড়লেও বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম PayPal এখনো এদেশে পুরোপুরি চালু হয়নি। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশে যেখানে PayPal সহজেই ব্যবহার করা যায়, সেখানে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি অনেকের কাছে বিস্ময়ের। তবে এর পেছনে রয়েছে কিছু বাস্তব ও কারিগরি কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, PayPal কেন এখনও বাংলাদেশে আসছে না—এর ১০টি প্রধান কারণ


১. আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আর্থিক নীতিমালার ঘাটতি

PayPal-এর মতো প্রতিষ্ঠান ফিনান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি ও AML (Anti-Money Laundering) নিয়মাবলীর প্রতি খুবই কঠোর। বাংলাদেশ এখনো কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক নীতিমালা মেনে চলতে ব্যর্থ, যা PayPal-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।


২. ডলার রেমিট্যান্স কনভারশন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার লেনদেনে কিছু কঠোর নিয়ম আরোপ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর জন্য এসব বিধিনিষেধ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


৩. অনলাইনে ফান্ড ট্রান্সফারের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাব

বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো আন্তর্জাতিক অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফারের উপর কিছুটা রক্ষণশীল। এটি PayPal-এর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়।


৪. কর কাঠামো ও প্রতিবন্ধকতা

PayPal বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করলে কর নীতিমালার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকা প্রয়োজন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ সংক্রান্ত কোনো প্রণোদনামূলক ও স্বচ্ছ কাঠামো তৈরি হয়নি।


৫. প্রতারণা ও সাইবার অপরাধের ঝুঁকি

বাংলাদেশে অনলাইন প্রতারণা এবং সাইবার অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। PayPal-এর মতো সংস্থা এসব ঝুঁকিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি তাদের জন্য ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হয়ে দাঁড়ায়।


৬. ব্যাংকিং অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা

অনেক বাংলাদেশি ব্যাংক এখনো API ইন্টিগ্রেশন বা আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবস্থার সঙ্গে সঠিকভাবে সংযুক্ত হতে সক্ষম নয়। এতে PayPal-এর অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।


৭. রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নীতিগত অনিশ্চয়তা

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত অস্থিরতা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। এটি PayPal-এর মতো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত করে।


৮. ফ্রড সিকিউরিটি ও কেওয়াইসি চ্যালেঞ্জ

PayPal KYC (Know Your Customer) প্রক্রিয়ায় খুবই কঠোর। কিন্তু বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই, ঠিকানা নিশ্চিতকরণ ও মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে।


৯. বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জটিলতা

PayPal যদি বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তাদেরকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়াও অন্যতম বাধা।


১০. বাজার লাভজনক না হওয়ার আশঙ্কা

PayPal বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করলে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু তারা যদি মনে করে বাজার এখনও যথেষ্ট লাভজনক নয়, তাহলে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে যায়।


শেষ কথা

বাংলাদেশে PayPal-এর না আসার পেছনে একাধিক প্রযুক্তিগত, নীতিগত এবং প্রশাসনিক বাধা কাজ করছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো—সরকার ইতোমধ্যে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম যেমন Xoom-এর মাধ্যমে PayPal-এর সীমিত সেবা চালু করেছে। যদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আর্থিক কাঠামো তৈরি করে, তবে PayPal-এর মতো গ্লোবাল জায়ান্ট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হবে।


আপনার মতামত জানান: আপনি কী মনে করেন, বাংলাদেশে PayPal চালু হওয়া কতটা জরুরি? মন্তব্য করুন ও শেয়ার করুন এই ব্লগটি।

magnifiercrossmenu