
"ইপস্টিন ফাইল"—এই শব্দবন্ধটি শুধু একটি মামলা বা ফাইল নয়, এটি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত যৌন নির্যাতন চক্রের প্রতীক। ধনকুবের, রাজনীতিবিদ, প্রিন্স, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে হলিউড সেলেব্রিটি—কত নাম জড়িয়ে আছে এই নেটওয়ার্কে! জেফ্রি ইপস্টিনের মৃত্যুর পর এসব গোপন ফাইল ও সাক্ষ্যপত্র উঠে এসেছে জনসমক্ষে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে নৈতিকতা, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
জেফ্রি ইপস্টিন ছিলেন একজন মার্কিন ধনকুবের ও আর্থিক পরামর্শক, যিনি বিলিয়নিয়ারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতেন। তার নাম একসময় হার্ভার্ড ও এলিট মহলের সঙ্গে উচ্চারিত হলেও, একসময় তিনি রীতিমতো এক যৌন অপরাধী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ইপস্টিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি কম বয়সী মেয়েদের যৌন নিপীড়নের জন্য একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন, এবং সেই নেটওয়ার্কে বিশ্বের নামিদামি মানুষদের যুক্ত করেছিলেন।
“ইপস্টিন ফাইল” বলতে বোঝানো হয়:
এইসব ফাইল ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১৯ এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে তদন্তের সময় সামনে আসে।
অনেক তরুণী, যাদের বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে, তারা আদালতে সাক্ষ্য দেন যে তারা ইপস্টিন এবং তার বন্ধুদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
ফাইল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেক উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সেলেব্রিটি ও রাজপরিবারের সদস্য এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ছিলেন:
ইপস্টিনের ব্যক্তিগত এই দ্বীপটি ছিল তার অপরাধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এখানে অনেক ভিকটিমকে নিয়ে যাওয়া হতো এবং সেখানে চলত ভয়ঙ্কর নির্যাতন।
ইপস্টিনের ব্যক্তিগত জেট "Lolita Express" -এর ফ্লাইট লিস্টে যেসব নাম উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। কে কখন কোথায় গিয়েছেন, কারা কতবার সেই বিমানে ছিলেন—এসব তথ্য থেকেই সন্দেহের তীর গড়ে ওঠে।
২০১৯ সালে জেলে আত্মহত্যা করেন ইপস্টিন—এই তথ্যটি যুক্তরাষ্ট্রে বিস্ময়ের ঝড় তোলে। অনেকেই বলেন, এটি ‘আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড’, কারণ তাঁর জীবিত অবস্থায় অনেক বড় রাঘববোয়ালদের মুখোশ খুলে যেতো।
ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যাওয়া, জেলের নিরাপত্তার ঘাটতি—সবকিছুই ষড়যন্ত্রের ইন্ধন জুগিয়েছে।
এই ফাইলগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
এই ফাইল কেবল এক ব্যক্তির অপরাধ নয়, এটি একটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দলিল।
ইপস্টিন ফাইল একটি সতর্কবার্তা—যে সমাজে অর্থ, ক্ষমতা, আর প্রভাবের বদলে নৈতিকতা ও মানবিকতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে, সেই সমাজ একসময় নিজেরই ভিত নষ্ট করে ফেলে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ফাইলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি আরও স্বচ্ছ, ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়া সমাজ গড়তে পারবো?