বাটা যেভাবে বদলে দিল বাংলাদেশের পায়ে হাঁটার সংস্কৃতি!

Category : 

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের পথে আজ যে স্বাভাবিকভাবে জুতো পায়ে মানুষের চলাফেরা আমরা দেখি, তা একসময় মোটেও সাধারণ ছিল না। কয়েক দশক আগেও দেশের অধিকাংশ মানুষ খালি পায়ে চলাফেরা করতো, বিশেষত গ্রামীণ জনগণ। এই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আন্তর্জাতিক মানের জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাটা (Bata)

বাটার বাংলাদেশে আগমন

১৯৬২ সালে বাটা বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে। এরও আগে ব্রিটিশ আমল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের উপস্থিতি থাকলেও, স্বাধীনভাবে বাংলাদেশে বাটার কারখানা স্থাপন ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তারা শুধু জুতা বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং জুতাকে জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ করে তোলার একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়েছিল।

খালি পা থেকে পায়ে জুতো—একটি সামাজিক রূপান্তর

বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশেষত গ্রামে খালি পায়ে চলাফেরাতেই অভ্যস্ত ছিল। অনেকেই জুতা পরাকে বিলাসিতা কিংবা শহুরে আচরণ মনে করত। কিন্তু বাটা যখন সাশ্রয়ী মূল্যে টেকসই জুতা বাজারে আনল, তখন প্রথমবারের মতো সাধারণ মানুষ মনে করল – জুতা পরা কেবল প্রয়োজন নয়, এটি স্বাস্থ্য ও মর্যাদার বিষয়ও।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসে জুতা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ

বাটার সস্তা ও মানসম্মত জুতা শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা ছিল আরেকটি বড় পদক্ষেপ। “স্কুল শু” ধারণাটি বাটার হাত ধরেই আসে। পাশাপাশি অফিসগামীদের জন্য চমৎকার চামড়ার জুতা বাটা তৈরি করেছিল, যা আধুনিক চাকরিজীবী সংস্কৃতিতে জুতা ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে।

গ্রামীণ বাজারে প্রবেশ ও পরিবেশনা

বাটার আরেকটি কৌশল ছিল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়া। তারা “বাটা মবাইল ভ্যান” ব্যবহার করে গঞ্জে গঞ্জে, মেলায় মেলায় জুতা বিক্রি শুরু করে। এতে করে গ্রামের মানুষ সহজেই জুতা কিনতে সক্ষম হয় এবং ধীরে ধীরে তারা জুতা পরার অভ্যাস গড়ে তোলে।

স্বাস্থ্য ও সচেতনতায় অবদান

জুতা পরার মাধ্যমে পা রক্ষা পায় নানা ধরণের সংক্রমণ ও আঘাত থেকে। বাটা এই বার্তাটি সচেতনভাবে প্রচার করে – বিজ্ঞাপন, পোস্টার, স্কুল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে। এভাবেই তারা স্বাস্থ্যসচেতনতার একটি নতুন ধারা চালু করে।

শেষকথা

আজকের বাংলাদেশে জুতা শুধু স্টাইল বা মর্যাদার প্রতীক নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের এক অনিবার্য উপকরণ। আর এই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অভ্যাস গড়ে তোলায় বাটার অবদান অনস্বীকার্য। শতবছর পার করে আজও বাটা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় জুতা ব্র্যান্ড—শুধু ব্যবসার জন্য নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতিহাসে তাদের স্থান চিরকাল অম্লান থাকবে।

magnifiercrossmenu